জীবনের মঞ্চে যখন শেষ বাঁশি বেজে ওঠে, তখন থেমে যায় শুধু একজন মানুষের নয়, থেমে যায় একটি যুগের গল্প। বৃহস্পতিবার ভোররাতে, মাত্র ৩টের কিছু পরে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রাক্তন হকি অলিম্পিয়ান ভেস পেজ। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতীয় ক্রীড়া জগতে।
ভেস পেজ—এই নাম উচ্চারণ করলে অনেকের মনে ভেসে ওঠে ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক্সের ব্রোঞ্জপদকের গৌরবময় মুহূর্ত। ভারতীয় হকির ইতিহাসে সেই সাফল্য ছিল এক গর্বের অধ্যায়। তারও আগে, ১৯৭১ সালের বার্সেলোনা হকি বিশ্বকাপে দেশের হয়ে আরও একটি ব্রোঞ্জ জয়ের সাক্ষী ছিলেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই সময়ে ভারতের হকির জয়ের গল্পে ভেস ছিলেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে লড়াই করছিলেন এক ভিন্ন ময়দানে—অসুস্থতার সঙ্গে। শারীরিক অবস্থার অবনতি সত্ত্বেও লিয়েন্ডার পেজ তাঁর বাবার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন বাড়িতেই। বুধবার সন্ধ্যায় অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু ভাগ্য আর সময় যেন তাঁর পক্ষে ছিল না। লিয়েন্ডার তখন বাবার পাশে, অশ্রুসজল চোখে শেষ মুহূর্তের সাক্ষী।

ভেস পেজ শুধু একজন অলিম্পিয়ান ছিলেন না, ছিলেন এক অনুপ্রেরণার প্রতীক—যিনি প্রমাণ করেছিলেন যে কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা আর খেলাধুলার প্রতি নিবেদিত মনোভাব দিয়ে স্বপ্নকে ছোঁয়া যায়। তাঁর প্রয়াণে ভারত হারাল এক স্বর্ণযুগের প্রতিনিধি, আর লিয়েন্ডার হারাল জীবনের প্রথম নায়ক—নিজের বাবাকে।
আজ ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে ভেসে উঠছে তাঁর খেলার স্মৃতি, জয়ের উল্লাস আর সেই চিরচেনা হাসি। শেষ বাঁশি বাজলেও, তাঁর গৌরবময় অধ্যায় চিরকাল বেঁচে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।