তারক হরি, পশ্চিম মেদিনীপুর।
দিন পেরোলেই ভাই-বোনের আন্তরিক সম্পর্কের প্রতীক, রাখিবন্ধন। এই উৎসবে শুধু হাতে রাখি বাঁধা নয়, তৈরি হয় এক নতুন বন্ধন—ভালোবাসা, প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তার। এই উৎসব শুধু ভাইবোনের সম্পর্কের নয়, জীবিকার নতুন আশাও হয়ে উঠছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে।

সবং ব্লকের কুচাইপুর গ্রাম, যা এখন পরিচিত “রাখির গ্রাম” নামে। এখানে প্রায় ৩০টিরও বেশি পরিবারের গৃহবধূরা কয়েক মাস ধরে দিন-রাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন হাজার হাজার রাখি। পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব সামলেই তারা ব্যস্ত রাখি, মালা ও অন্যান্য সাজসজ্জার সামগ্রী তৈরিতে। এই কাজই তাঁদের আর্থিক স্বনির্ভরতার মূল ভরসা হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় গৃহবধূ শুভ্রা দে বলেন,“সংসারের কাজের ফাঁকে এই কাজ করে যতটুকু উপার্জন হয়, আমাদের মত সাধারণ পরিবারের পক্ষে তা অনেক। এই টাকা আমরা সংসারের খরচে লাগাতে পারি।”
এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দা স্বপন কুমার অট্ট। তিনি এই গৃহবধূদের কাঁচামাল সরবরাহ করেন এবং পরে সেই তৈরি সামগ্রী সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। তাঁর কথায়,

“এই গ্রামে বেশিরভাগ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। আমি চাই এই শিল্পটিকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে। সরকারিভাবে একটু সহায়তা পেলে সবাই উপকৃত হতেন।”
এই গ্রামে যে শুধুই রাখি তৈরি হচ্ছে তা নয়—প্লাস্টিক ফুল, রঙিন পুঁতি, মেয়েদের ফ্যাশন সামগ্রী থেকে শুরু করে উৎসবের সময় বিভিন্ন মালা, সবই তৈরি হচ্ছে গৃহবধূদের হাত ধরে। প্রতিটি রাখির সঙ্গে জড়িয়ে থাকছে তাদের পরিশ্রম, আশা ও আত্মনির্ভরতার গল্প।

এই উদ্যোগ শুধুমাত্র গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে না, পাশাপাশি উদাহরণ তৈরি করছে—কীভাবে সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজের প্রান্তিক মহিলারাও হয়ে উঠতে পারেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন।
রাখি বন্ধনের আগে যেমন চাহিদা বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে এই গ্রামের পরিচিতিও। তাই আজ অনেকেই কুচাইপুরকে ভালোবেসে ডাকছেন—”রাখির গ্রাম” নামে।