ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় বারবার প্রশ্ন ওঠে—আমরা কি সত্যিই বিজ্ঞানকে বিজ্ঞান হিসেবেই পড়াই, আর পুরাণকে পুরাণ হিসেবেই রাখি? হিমাচল প্রদেশের উনা জেলার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় স্পেস ডে-তে উপস্থিত হয়ে বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই প্রশ্নকে আরও উসকে দিলেন।

সেদিন তিনি ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করেন—“প্রথম মানুষ কে মহাকাশে গিয়েছিল?” উত্তর আসে—“নীল আর্মস্ট্রং।” কিন্তু এই উত্তর ভুল। বাস্তবে ১৯৬১ সালে সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনই (Yuri Gagarin) পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম মানুষ হিসেবে প্রবেশ করেন। নীল আর্মস্ট্রং ১৯৬৯ সালে চাঁদে পা রাখা প্রথম মানুষ।
কিন্তু বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে সাংসদের বক্তব্যে। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় প্রথম মহাকাশযাত্রী ছিলেন হনুমানজি।” তারপর নিজেই সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন।
Anurag Thakur : Who was the first space traveller?
— Tarun Gautam (@TARUNspeakss) August 24, 2025
Students: Neil Armstrong
Anurag Thakur : No, it's Hanumanji.
This is how these non-scientific id!ots are corrupting young minds.pic.twitter.com/fw1oXU6kce
পুরাণ বনাম বিজ্ঞান: শিক্ষার সংকট
এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন—একজন সাংসদ যদি শিশুদের সামনে ইতিহাসের জায়গায় পৌরাণিক কাহিনি উপস্থাপন করেন, তবে শিক্ষার মান কোথায় দাঁড়াবে?
ভারতের সংবিধানের ৫১ (এ) (h) অনুচ্ছেদ বলছে—রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক মানসিকতা ও যুক্তিবাদী চেতনা গড়ে তোলা। সেখানে পুরাণকে বিজ্ঞান হিসেবে পড়ানো কি সঠিক?

অবশ্যই রামায়ণ-মহাভারত আমাদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতীক। হনুমানজি ভক্তি ও শক্তির প্রতিমূর্তি। কিন্তু তাঁকে মহাকাশযাত্রী বলা ইতিহাস নয়। ইতিহাস মান্য করতে হলে প্রমাণ জরুরি—যেমন একসময় ট্রয় নগরীকে কেবল কল্পকাহিনি বলা হলেও পরে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ মিলেছিল।
কিন্তু হনুমান বা অন্য পৌরাণিক চরিত্রদের মহাকাশ ভ্রমণের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ফলে এগুলি আস্থা বা সংস্কৃতির অঙ্গ হতে পারে, কিন্তু ইতিহাস নয়।
শিক্ষা মানে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য শুধু তথ্য শেখানো নয়, বরং ইতিহাস ও পুরাণ, বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা তুলে ধরা। ছাত্রছাত্রীরা ভুল উত্তর দিলে তা তাদের জ্ঞানের অভাব। কিন্তু একজন সাংসদ যদি ইতিহাস বিকৃত করেন, তা শিক্ষার জন্য আরও বড় সংকট তৈরি করে।
পুরাণ অবশ্যই শেখানো উচিত, তবে তা পুরাণ হিসেবেই। বিজ্ঞান ও ইতিহাসের জায়গায় নয়। কারণ শিক্ষা মানে শুধু বিশ্বাস নয়, প্রমাণের উপর দাঁড়ানো সত্য শেখানো।