গত ৪ নভেম্বর ২০২৫-এ ক্রিকেটের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি হল। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল, হরমনপ্রীত কৌর-এর নেতৃত্বে, প্রথমবারের মতো ICC Women’s Cricket World Cup 2025 জিতে ইতিহাস গড়ল।
এই জয়ের মধ্যেই উঠে এল এক মানবিক দৃশ্য — দলের সদস্যরা ট্রফিটি তুলে দিলেন দেশের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার Mithali Raj ও Jhulan Goswami-কে।
এই দৃশ্য দেখে ভারতের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার Ravichandran Ashwin মন্তব্য করেন —
“এটি শুধু একটি জয় নয়, এটি সম্মানের এক পাঠ। ভারতের পুরুষ দল কখনো এমনটা করেনি।”
এই আর্টিকেলে আমরা জানব — কেন অশ্বিনের এই মন্তব্য এত গুরুত্বপূর্ণ, কীভাবে মহিলা দল ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ভবিষ্যৎকে অনুপ্রাণিত করেছে, এবং কেন এটি ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতির জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত।
১. শ্রদ্ধা ও আত্মসম্মানের প্রতীক: মহিলা দল যেখানে আলাদা
ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের জয় ছিল ঐতিহাসিক, কিন্তু আরও ঐতিহাসিক ছিল তাদের আচরণ।
ম্যাচ শেষে দলের সদস্যরা ট্রফিটি তুলে দেন Mithali Raj ও Jhulan Goswami-র হাতে — দুই নারী, যাঁরা বহু বছর ধরে মহিলা ক্রিকেটের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন।
Ravichandran Ashwin বলেন,
“এই দলের খেলোয়াড়রা জানে তারা কোথা থেকে এসেছে। তারা জানে তাদের জন্য কেউ পথ তৈরি করেছিল।”
এই ঘটনাটি পুরুষ দলের সঙ্গে এক তীব্র তুলনা টানে।
২০১১ সালে যখন পুরুষ দল বিশ্বকাপ জিতেছিল, তখন কোনো প্রাক্তন খেলোয়াড়কে সেইভাবে মঞ্চে নিয়ে এসে সম্মান জানানো হয়নি।
অর্থাৎ, মহিলা দল দেখিয়েছে — জয় তখনই পূর্ণ হয়, যখন তুমি সেই জয়কে শিকড়ের সঙ্গে ভাগ করে নাও।
এটি শুধু এক প্রতীকী পদক্ষেপ নয়; এটি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন। আজকের প্রজন্মের মহিলা ক্রিকেটাররা জানেন যে ইতিহাস মানে শুধুই রেকর্ড নয় — সেটি এক সংগ্রামের গল্প, যা তারা শ্রদ্ধার সঙ্গে বহন করছেন।
২. দীর্ঘ সংগ্রাম ও সাহসের ইতিহাস

ভারতের মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাস সহজ ছিল না।
২০০৫ ও ২০১৭ সালে দুইবার বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে দল হেরে গিয়েছিল। সেই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়েই তারা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়।
এই সময় Mithali Raj, Jhulan Goswami, Smriti Mandhana, Deepti Sharma-রা এক নতুন অধ্যায় লিখেছেন।
Harmanpreet Kaur-এর নেতৃত্বে এই দল শুধু ক্রিকেট খেলেনি — তারা একটি ‘আচরণবিধি’ও তৈরি করেছে।
- তারা মাঠে সম্মান ও সংযমে বিশ্বাসী।
- তারা ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধ।
- তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখিয়েছে, কীভাবে জয় শুধু নিজের নয় — দলের, দেশের, এবং অতীতেরও।
Ravichandran Ashwin বলেন,
“এই জয় একদিনে আসেনি। এটি ২৫ বছরের সংগ্রাম, ঘাম, এবং ত্যাগের ফল।”
এখানে মহিলা ক্রিকেটের সাফল্য শুধুমাত্র ম্যাচ জয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় — এটি এমন এক প্রমাণ যে, পরিশ্রম, সম্মান এবং ঐক্যের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব।
৩. শ্রদ্ধার সংস্কৃতি: ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়

এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভারতের মহিলা দল এমন এক সংস্কৃতির জন্ম দিল, যা হয়ত ভবিষ্যতে ক্রিকেটের রূপই বদলে দিতে পারে।
Ashwin এর মন্তব্য কেবল প্রশংসা নয় — এটি এক আত্মসমালোচনাও।
তিনি বলেছেন —
“আমরা পুরুষ দল হিসেবে অনেক জয় দেখেছি। কিন্তু কখনো এইভাবে পূর্বসূরিদের প্রতি প্রকাশ্যে শ্রদ্ধা জানাইনি। মহিলারা যা করল, সেটা অনুপ্রেরণার।”
এই কথার মধ্যে গভীর বার্তা আছে।
মহিলা দল প্রমাণ করেছে, ক্রিকেটে শুধু স্কোর নয় — মানবিকতা, শিকড় ও স্মৃতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের এই আচরণ তরুণ প্রজন্মের কাছে এক বড় শিক্ষা —
- শ্রদ্ধা প্রদর্শন দুর্বলতা নয়, এটি শক্তির প্রকাশ।
- জয় তখনই মহান, যখন তুমি তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে পার।
এই ধারা যদি ভবিষ্যতে পুরুষ দলও অনুসরণ করে, তাহলে ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কৃতিতে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।
৪. সামাজিক প্রভাব ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের এই উদ্যোগ শুধু মাঠে নয়, সমাজেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
আজ দেশের অনেক ছোট শহরের মেয়েরা এই দলকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
তারা দেখছে — ক্রিকেট মানে শুধু খেলা নয়, নিজের পরিচয় তৈরি করার একটি পথ।
এই দলের সদস্যরা দেখিয়েছেন, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা শুধু ব্যক্তিগত নয় — এটি সাংস্কৃতিক শক্তি।
এটি শেখায়, বড় হওয়া মানে অতীতকে ভুলে যাওয়া নয়, বরং তাকে সঙ্গে নিয়ে এগোনো।
ভবিষ্যতে যদি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) এবং পুরুষ দলও এমন উদ্যোগ নেয়, যেমন প্রাক্তনদের জন্য নিয়মিত শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান, তবে তা শুধু ক্রিকেট নয় — ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
উপসংহার
এই ঘটনাটি এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে — জয় তখনই পূর্ণ হয়, যখন সেটি অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।
Harmanpreet Kaur নেতৃত্বে ভারতের মহিলা দল দেখিয়েছে, ইতিহাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
আর Ravichandran Ashwin-এর প্রশংসা শুধু এক মন্তব্য নয়, বরং একটি বার্তা — পুরুষ দলও যেন শিখে, জয় মানে শুধুই ট্রফি নয়, এটি সংস্কৃতি ও মানবিকতার প্রতিফলন।
আপনার মতামত কী?
আপনি কি মনে করেন, পুরুষ দলও এমন শ্রদ্ধার ধারা শুরু করা উচিত?
আপনার মত জানাতে ভুলবেন না — নিচে কমেন্ট করুন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন, যেন আরও মানুষ এই গল্পটি জানতে পারে।






