ডিজিটাল যুগে নেটপ্রভাবীদের (influencers) প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁদের প্রতিটি পোস্ট, ভিডিও বা বক্তব্য মুহূর্তের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু সেই জনপ্রিয়তা ও স্বাধীনতা যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার আড়ালে লুকিয়ে যায়, তখন বিপদ ডেকে আনে সমাজের জন্যই। আর সেই কারণেই এবার সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিল— বাক্স্বাধীনতার অধিকারকে কনটেন্ট তৈরির রক্ষাকবচ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।

আদালতের কড়া বার্তা
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত ও জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ জানায়, নেটপ্রভাবীরা মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কনটেন্ট তৈরি করেন। তাই যদি কোনও কনটেন্ট ‘কমার্শিয়াল’ বা ‘নিষিদ্ধ বক্তৃতা’র আওতায় পড়ে, সেখানে বাক্স্বাধীনতার দোহাই দেওয়া যাবে না। শুধু ক্ষমা চেয়ে দায় এড়ানোর সুযোগও আর থাকছে না।
-1756106197975.webp)
বিতর্কিত ঘটনার প্রেক্ষাপট
এই মন্তব্য উঠে আসে ইউটিউবার ও নেটপ্রভাবী রণবীর ইলাহাবাদিয়া এবং আরও পাঁচ প্রভাবীর বিরুদ্ধে ওঠা মামলার প্রেক্ষিতে। অভিযোগ— তাঁরা বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন। এর জেরে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে ওঠে।
অভিযুক্ত পাঁচ প্রভাবী— সময় রায়না, বিপুল গয়াল, বলরাজ পরমজিৎ সিংহ ঘাই, সোনালি ঠাকুর ও নিশান্তজগদীশ তনওয়ার— ইতিমধ্যেই আদালতে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তাঁদের নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল থেকেও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের মূল স্রোতে আনার জন্য তাঁরা কী পদক্ষেপ নিলেন, তার বিস্তারিত হলফনামা জমা দিতে হবে।

কেন্দ্রকে নির্দেশ
আদালতের কড়া পর্যবেক্ষণ— শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় নেটপ্রভাবীদের বিচ্যুতি দেখে তড়িঘড়ি কোনো আইন আনা যাবে না। বরং যোগাযোগ প্রযুক্তি ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে কার্যোপযোগী ও প্রশস্ত গাইডলাইন তৈরি করতে হবে কেন্দ্রকে। না হলে, তরুণ প্রজন্ম নিয়ম ভেঙে বেরোনোর পথ খুঁজে নেবে সহজেই।
আদালত বলেছে— “সীমা লঙ্ঘন যতটা গুরুতর, অনুতাপও ততটাই হওয়া উচিত। তবেই সমাজের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছবে।” স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এবার শুধুমাত্র ক্ষমা প্রার্থনা নয়, বরং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ প্রমাণ করতে হবে নেটপ্রভাবীদের।