The Indian Chronicles | কলকাতা, আগস্ট ২০২৫
রাখি পূর্ণিমা — নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভাই-বোনের ভালোবাসার মিষ্টি বন্ধন। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এই উৎসব, যেখানে বোনেরা ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে তার দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলের কামনা করে। ভাইও তার প্রতিদানে বোনকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এ যেন ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার এক নিঃশব্দ অঙ্গীকার।

কিন্তু জানেন কি, ইতিহাসের পাতায় রাখি একসময় শুধুই ভাই-বোনের উৎসব ছিল না — বরং এটি ছিল যুদ্ধ থামানোর এক শান্তিপূর্ণ কৌশল?

হ্যাঁ, রাখি পূর্ণিমার একটি অজানা অধ্যায় লুকিয়ে রয়েছে রাজপুত ইতিহাসে। ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে চিতোরের রানী কর্ণাবতী যখন গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহের আক্রমণে সঙ্কটে পড়েন, তখন তিনি সাহায্যের আশায় মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে একটি ‘রাখি’ পাঠান। রানীর হাতে লেখা চিঠির সঙ্গে পাঠানো হয়েছিল সেই শুভ্র সুতো, যা ছিল সম্পূর্ণ প্রতীকী। এক রাজপুত রাণীর পক্ষ থেকে একজন মুসলিম সম্রাটের হাতে রাখি — এটি ছিল এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত, যেখানে ধর্ম, বর্ণ কিংবা রাজনৈতিক শত্রুতা নয়, প্রাধান্য পেয়েছিল মানবিকতা ও সম্মানের বন্ধন।

হুমায়ুন সেই ‘রাখি’র মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন। যুদ্ধ থামিয়ে চিতোর রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। যদিও ততক্ষণে কর্ণাবতী জহরব্রত পালন করে প্রাণ ত্যাগ করেন, তবুও রাখির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও প্রতিশ্রুতির ইতিহাস হয়ে থাকে অনন্য।
এই ঘটনা আজকের দিনে হয়তো পাঠ্যপুস্তকে নেই, কিন্তু রাখির ইতিহাসে এটি এক অলিখিত, অথচ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যেখানে এক ‘রাখি’ হয়ে উঠেছিল যুদ্ধ ও ধ্বংসের মাঝে শান্তির প্রতীক — ভালোবাসা ও বিশ্বাসের এক সর্বোচ্চ নিদর্শন।

রাখি পূর্ণিমা শুধুই এক পারিবারিক উৎসব নয়, বরং তা হয়ে উঠতে পারে সমাজে সম্প্রীতির সেতুবন্ধনের উৎসবও। আজকের ভারতবর্ষে যখন বারবার ধর্মীয় বিভাজন কিংবা সামাজিক সংকটের মুখে দাঁড়াতে হয়, তখন এই ‘রাখি কাহিনি’ আমাদের শেখায় — ভালোবাসার বন্ধন সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
রাখি শুধু রেশমের সুতো নয়। এটি বিশ্বাস, ভরসা ও মানবিকতার প্রতীক। হয়তো এ কারণেই আজও রাখি পূর্ণিমার দিনে শুধু ভাই নয়, সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে পুলিশ, সেনাবাহিনী এমনকি প্রতিবেশীকেও রাখি পরান অনেকেই। ইতিহাসের সেই রাখির মতোই — যা একদিন থামিয়ে দিয়েছিল যুদ্ধ।