কলকাতার দুর্গাপুজো মানেই বাঙালির আবেগ, স্মৃতি আর ইতিহাসের অঙ্গ। সেই ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নাম এক বিশেষ জায়গায় জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার আন্দোলনে যেমন তিনি বাঙালির অহংকার, তেমনি দুর্গাপুজোর আচার-অনুষ্ঠানেও তাঁর পদচিহ্ন রয়েছে।
/indian-express-bangla/media/media_files/jus6PpskdgGE9zL4mrAD.jpg)
পরিবারের পুজো ও সুভাষের শৈশব স্মৃতি
সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম কাটি’তে হলেও তাঁর বড় হওয়া মূলত কাশী মিত্র স্ট্রিটের বাসভবনে। বসু পরিবারের দুর্গাপুজো ছিল জমজমাট। ছোটবেলা থেকেই সুভাষ দেখতেন প্রতিমা গড়ার দৃশ্য, মন্ত্রোচ্চারণ আর মানুষের মিলনমেলা। শৈশবেই তাঁর মনে পুজো হয়ে উঠেছিল সামাজিক সংহতির প্রতীক।
কারাবন্দি নেতাজি ও দূরে থেকেও পুজোর টান
ব্রিটিশদের কারাগারে থেকেও দুর্গাপুজো থেকে দূরে থাকতে পারেননি নেতাজি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, কীভাবে পুজোর স্মৃতি তাঁকে সংগ্রামের শক্তি জুগিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে দুর্গাপুজো ছিল শক্তির প্রতীক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা।

আজাদ হিন্দ ফৌজে দুর্গোৎসব
সিঙ্গাপুর ও বার্মায় আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের মনোবল বজায় রাখতে নেতাজি দুর্গাপুজোর আয়োজনের অনুমতি দেন। প্রতিমা না থাকলেও প্রতীক দিয়েই সৈন্যরা ‘মা দুর্গা’র বন্দনা করতেন। এই পুজো ছিল আসলে “শক্তির উৎসব”, যেখানে ধর্মের চেয়ে বড় ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন।
নেতাজির ভাবনা ও দুর্গাপুজোর প্রতীকী অর্থ
নেতাজির কাছে দুর্গাপুজো মানে আত্মশক্তি জাগ্রত করা। মহিষাসুর বিনাশ ছিল তাঁর কাছে অন্যায়, শোষণ ও দাসত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভারতবাসীর শক্তি একদিন সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করবে।

কলকাতার দুর্গাপুজোতে নেতাজির পদচিহ্ন
কলকাতার বহু ঐতিহ্যবাহী পুজোয় নেতাজির উপস্থিতি ইতিহাস হয়ে আছে। বসু পরিবারের পুজো, শোভাবাজার ও শ্যামবাজার রাজবাড়ির পুজোয় তাঁর আগমন মানে ছিল বাঙালির আবেগের বিস্ফোরণ। মানুষ বিশ্বাস করত, মা দুর্গা স্বাধীনতার সৈনিকদের রক্ষা করছেন।
আজকের সময়ে তাৎপর্য
আজ, দুর্গাপুজো UNESCO-র ‘Intangible Cultural Heritage’-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। নেতাজি-জড়ানো কাহিনি তাই আরও তাৎপর্যপূর্ণ। উৎসব শুধু আনন্দ নয়, তা সামাজিক শক্তি ও জাতীয় চেতনার প্রতীক—যা নেতাজি আমাদের শিখিয়ে গিয়েছিলেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আর দুর্গাপুজো—দুটোই বাঙালির পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন ছিলেন বাঙালির শক্তির প্রতীক, অন্যটি দেবীর শক্তির আরাধনা। ইতিহাস প্রমাণ করে, এই মিলন ধর্মীয় উৎসবকে জাতীয় আন্দোলনের প্রাণশক্তিতে রূপ দিয়েছিল।