কলকাতার এক বিজ্ঞানী দিল্লির ‘মেঘবীজরণ’ প্রচেষ্টার আগেই তৈরী করেছিলেন কৃত্রিম বৃষ্টি

১৯৫২ সালে কলকাতার বিজ্ঞানী এসকে বানার্জি বিমানের বদলে বেলুন ও সিলভর আইয়োডাইড দিয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি করিয়েছিলেন — দিল্লির মেঘবীজরণ প্রচেষ্টার আগেই।

Table of Contents

Share Our Blog Now :
Facebook
WhatsApp

বাঙালি বিজ্ঞানপ্রেমীদের মাঝে হয়তো এতটা আলোচনায় আসেনি — কিন্তু ঘটনা হলো, Sudhanshu Kumar Banerji (সাধারণভাবে ‘এস কে বানার্জি’ নামে পরিচিত) কলকাতায় ১৯৫২ সালে একান্ত খরচ কম করে, নিজস্ব উদ্যোগে কৃত্রিম বৃষ্টি অর্জন করেছিলেন।

এটি ঘটনাক্রমে সেই দেশের ইতিহাসে বড় একটি ঘটনা — কারণ মেঘবীজরণ বা ক্লাউড-সিডিং নামে যেটি সেন্সরের চোখে আজ আলোচনায় আসে, সেটার থেকেও অনেক আগেই এই প্রয়াস করেছিলেন বানার্জি।
এই নিবন্ধে আমরা সেই ঘটনা বিশ্লেষণ করব — কেন তিনি এগিয়েছিলেন, কীভাবে তার পরীক্ষা হয়েছিল, এবং আজকের দিনে তার গুরুত্ব কী।


১. এক অগ্রগামী উদ্যোগ: বানার্জির কৃত্রিম বৃষ্টির পরীক্ষা

১৯৫০-এর দশকে বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বা বায়ুমণ্ডলীয় কর্মসূচিতে মেঘবীজরণের ধারণা নতুন মাত্রায় প্রবেশ করেছে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিজ্ঞানী ক্লাউড সিডিং নিয়ে কাজ করেছিলেন।
তবে ভারতের প্রসঙ্গে বানার্জি ছিলেন সেই পথিকৃৎ যিনি ১৯৫২ সালে কলকাতার College of Engineering & Technology, Jadavpur থেকে হাইড্রোজেন পূর্ণ বেলুন, রূপান্তরিত সিলভর আইয়োডাইড (silver iodide) ও অন্যান্য বীজকীয় উপকরণ ব্যবহার করে মেঘবীজরণের একটি পরীক্ষা চালান।

কী ছিল মূল পদ্ধতি:

  • বানার্জি নিজে একটি গ্লাস ক্লাউড চেম্বার তৈরি করেছিলেন যেখানে মূলত পরীক্ষা‑পরীক্ষা করা হয়েছিল।
  • এর পরে, তিনি হাইড্রোজেন ভর্তি বেলুন ব্যবহার করেছিলেন যেগুলো মেঘের দিকে বা উপযুক্ত বায়ুমণ্ডলীয় স্তরে সিলভর আইয়োডাইড বাষ্প বা ড্রাই আইস ব্যবহার করে বীজকীয় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
  • তিনি তখন বিমানের সাহায্য নেননি — কারণ সে সময় বাজেট সীমিত ছিল — তাই বেলুনের ওপর নির্ভর করেছিলেন।

ফলাফল: প্রায় প্রতিদিন সফল ছিল এবং এমনকি আশপাশের এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার অভিযোগ করেছিলেন।
এইভাবে বানার্জি প্রমাণ করেছিলেন যে ভারতে কম খরচে, স্থানীয় পর্যায়ে একটি বীজকীয় বৃষ্টি‑উৎপাদন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে।


২. দিল্লির ‘মেঘবীজরণ’ এবং সময়সাপেক্ষ প্রেক্ষাপট

আজকের দিনে আমরা যখন New Delhi‑তে ফের উঠতি আলোচনায় দেখছি ‘ক্লাউড সিডিং’ বা কৃত্রিম বৃষ্টির উদ্যোগ — যেমন ২০২৫ সালে Indian Institute of Technology, Kanpur এবং স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় একটি মডেল চালু হয়েছে।
এমন সময় বানার্জির কাজ স্মরণ করিয়ে দেয় যে এই ধরনের উদ্যোগ একদম নতুন নয়। উদাহরণস্বরূপ:

  • ভারতের প্রথম উল্লেখযোগ্য ক্লাউড সিডিং পরীক্ষাগুলো ১৯৫৭ সালে দিল্লিতে হয়েছিল — তখনও বিমানের বদলে গ্রাউন্ড‑জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছিল।
  • বানার্জির উদ্যোগ ১৯৫২‑এ, তা প্রায় এক দশক আগেই।
  • আজকার প্রযুক্তি উন্নত হলেও, বানার্জির সময় বাজেট, উপকরণ, তথ্যপ্রমাণ অনেক সীমাবদ্ধ ছিল — সে দিক থেকে এটি যুগান্তকারী।

এমনভাবে, আমরা দেখতে পাই — যদিও আজকের ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি বিমান, স্যাটেলাইট, মডেলিং সহ অনেক উন্নত হয়েছে — বানার্জির বাস্তব পরীক্ষাটি প্রযুক্তি ও প্রয়াস উভয়ের দিক থেকেই অত্যন্ত আগ্রাসী ছিল।


৩. শিক্ষণীয় ও আগামী‑চিন্তার বিষয়াবলী

Image

বানার্জির কাজ শুধু ইতিহাস নয় — আজ‑কালেও আমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও প্রশ্ন রেখে গেছে:

৩.১ উদ্ভাবন ও স্থানীয় পরিস্থিতি

বানার্জি দেখিয়েছেন, বড় প্রতিষ্ঠান বা অনেক বাজেট না থাকলেও সৃজনশীল ভাবনা ও নিজের হাতের মেকানিজম দিয়ে সময়াতীত কাজ করা সম্ভব। আজকের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি শিক্ষণীয় — বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তন, জলবায়ু মোকাবিলা ক্ষেত্রে যেখানে বড় খরচ ও প্রযুক্তি দরকার হয়।

৩.২ প্রযুক্তি ও নৈতিকতা

ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক আছে — একদিকে এটি হয়তো অনানুষ্ঠানিকভাবে বৃষ্টিপাত বাড়াতে পারে, অন্যদিকে এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ‑দুর্গতি, পার্শ্বপ্রভাব, ন্যায্যতা ইত্যাদি প্রশ্ন তোলে।

৩.৩ ইতিহাসের ভুলাবরণ‑হওয়া অধ্যায়

বাংলা বা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান ইতিহাসে বানার্জির এই অধ্যায় ততটা আলোচনায় নেই — যা প্রশ্ন তোলে: কেন এই অধ্যায় সাধারণ শিক্ষিত বা বিজ্ঞানপাঠক‑সমাজে বেশি জায়গা পায়নি?

৩.৪ আগামী প্রয়াসের দিশা

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন, জলব্যালয় সংকট, বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বড় ইস্যু। বানার্জির মতো উদ্যোগ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়া যেতে পারে — যেমন কম খরচে, স্থানীয় উপাদান দিয়ে আবহাওয়া‑সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় মন দেওয়া। সেই সঙ্গে, বড় উদ্যোগগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ, প্রভাব মূল্যায়ন ও নৈতিক‑পরিবেশগত দিকনির্দেশনা যুক্ত হওয়া জরুরি।


১৯৫২‑এর কলকাতা‑ভিত্তিক বানার্জির কৃত্রিম বৃষ্টির পরীক্ষা শুধুই এক বিজ্ঞানী‑প্রয়াস ছিল না — ছিল স্বাধীন চিন্তা, সৃজনশীল সমাধান ও দেশীয় বিজ্ঞানপ্রবাহের নিয়তি। আজ যখন আমরা একাধিকবার ক্লাউড সিডিং, বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ বা আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে কথা বলি, তখন এই ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রযুক্তি এবং প্রয়াসের মাঝখানে মানুষের উদ্ভাবন‑ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ
আপনিও ভাবুন — আপনার এলাকায় কি এমন কোনো বিজ্ঞানপ্রযুক্তি বা উদ্ভাবন রয়েছে যার প্রতি নজর দেওয়া উচিত? এখানে কি উপাদান বা প্রেক্ষাপট আছে যেটিকে “স্থানীয় ভাবে সমাধান” করা যেতে পারে?
আপনাদের মতামত বা মন্তব্য জানতে আগ্রহী — নিচে কমেন্ট করুন, লিংক শেয়ার করুন বা এই গল্প আরও অনেকের সঙ্গে শেয়ার করুন।

RELATED Articles :
বিনোদন

ধর্মেন্দ্রর মৃত্যু নিয়ে গুজব খণ্ডন করলেন সানি দেওলের টিম: ‘তিনি স্থিতিশীল ও পর্যবেক্ষণে আছেন’

সানি দেওলের টিম জানিয়েছে, ধর্মেন্দ্র সুস্থ ও পর্যবেক্ষণে আছেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে ছড়ানো খবর সম্পূর্ণ ভুয়া।

Read More »
দেশ বিদেশ

“বাচ্চে শ্বাস নেহি লেতে?” – দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে পরিষ্কার বাতাসের দাবিতে নাগরিকদের জোরালো প্রতিবাদ

“বাচ্চে শ্বাস নেহি লেতে?” স্লোগানে দিল্লির নাগরিকরা ইন্ডিয়া গেটে জড়ো হয়ে দাবি জানালেন — পরিষ্কার বাতাস চাই, ভবিষ্যতের বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন।

Read More »
বিনোদন

দীপিকা পাড়ুকোনের ১৮ বছরের জয়যাত্রা: বলিউডের অপ্রতিরোধ্য রাণী যিনি প্রতিটি ফ্রেমে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস

দীপিকা পাড়ুকোনের ১৮ বছরের বলিউড যাত্রা উদযাপন—সাফল্য, সংগ্রাম ও গ্লোবাল আইকন হয়ে ওঠার গল্প।

Read More »
দেশ বিদেশ

অ্যান্ডামান দ্বীপপুঞ্জে ৬.০৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপন: উদ্বেগ ছড়ালো উপকূল জুড়ে

অ্যান্ডামান দ্বীপপুঞ্জে ৬.০৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপন অনুভূত, তবে বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে।

Read More »
বিনোদন

সব্যসাচীর প্রশংসা: “দীপিকা পদুকোন আমাদের সাংস্কৃতিক দূত হওয়া উচিত”—ভারতের গ্লোবাল প্রতিনিধিত্বে দীপিকার উজ্জ্বল ভূমিকা

সব্যসাচী মুখার্জি দীপিকা পদুকোনকে ভারতের সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে বর্ণনা করলেন, যিনি বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় গৌরব তুলে ধরছেন।

Read More »
The Bengal Files selected for Indian Panorama at IFFI 2025
বিনোদন

‘The Bengal Files’: সত্যের জয়গান – ইন্ডিয়ান প্যানোরামায় নির্বাচিত হল বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর সাহসী সৃষ্টি

The Bengal Files’ নির্বাচিত হল ইন্ডিয়ান প্যানোরামায় IFFI-তে। বিবেক অগ্নিহোত্রীর সাহসী চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে ১৯৪৬ সালের সত্য কাহিনি।

Read More »
error: Content is protected !!