কলকাতার বুকে ফের এক চাঞ্চল্যকর হানিট্র্যাপ কাণ্ড। প্রেমের ছলে মাদক খাইয়ে সর্বস্ব লুট—এই চক্রের পেছনে ছিল এক বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তজুড়ে গড়ে তুলেছিল একটি সুপরিকল্পিত অপরাধচক্র। কলকাতা পুলিশ সম্প্রতি এই চক্রের মূল হোতা-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রেম নয়, ছিল ফাঁদ: কীভাবে কাজ করত চক্রটি?
চক্রটি অনলাইনে, বিশেষ করে ডেটিং অ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পুরুষদের টার্গেট করত। প্রায়শই একাধিক ভুয়ো প্রোফাইল ব্যবহার করে তারা নিরীহ পুরুষদের প্রেমের জালে ফাঁসাত। বন্ধুত্ব গাঢ় হলে নির্জন জায়গায় দেখা করার প্রস্তাব আসত। এরপরই শুরু হত মূল অপরাধ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দেখা করার সময় চক্রের সদস্যারা লক্ষ্যবস্তু পুরুষদের ঠান্ডা পানীয় বা খাবারের মধ্যে চেতনানাশক মিশিয়ে খাওয়াত। অজ্ঞান হওয়ার পর ল্যাপটপ, মোবাইল, ওয়ালেটসহ প্রায় সমস্ত কিছু লুট করে নেওয়া হত।

সীমান্তপারের যোগসূত্র: বাংলাদেশি নাগরিক কীভাবে পরিচালনা করছিল চক্র?
এই চক্রের মাথা এক বাংলাদেশি নাগরিক, যার নাম এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। ধৃত ব্যক্তি কলকাতা ও বাংলাদেশ উভয় জায়গায় সক্রিয়ভাবে এই হানিট্র্যাপ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছিল। একাধিক ছদ্মনামে সে ভারতে প্রবেশ করে এবং সাউথ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকত।
ধৃতের মোবাইল ফোন ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে, সে ভারতীয় সিমকার্ড ও ফেক আইডি ব্যবহার করে অনলাইন প্রোফাইল তৈরি করত। এমনকি চক্রের সদস্যদের বাংলাদেশ থেকেও ভারতে পাঠানো হত, যারা এখানে এসে নির্ধারিত অপারেশনে অংশ নিত।
এই অপরাধচক্র শুধু কলকাতাতেই নয়, মুম্বাই ও দিল্লিতেও শাখা বিস্তার করছিল। সীমান্তের গা ঘেঁষে এ ধরনের অপরাধচক্রের মাধ্যমে মানব পাচার, ডেটা চুরি, এবং অর্থ লুটপাট—এই সবই চলছিল এক ছাতার নিচে।
কী কী উদ্ধার করল পুলিশ?
কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি-সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও লালবাজারের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেছে। অভিযানে ধৃতদের কাছ থেকে যা উদ্ধার হয়েছে তা হলো:
- ১৪টি মোবাইল ফোন
- ৫টি ল্যাপটপ
- বিভিন্ন ভুয়ো পরিচয়পত্র
- নগদ প্রায় ₹৩ লক্ষ টাকা
- বিভিন্ন ডেটিং অ্যাপ ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট
এই প্রমাণগুলি থেকে স্পষ্ট, এটি একটি সুসংগঠিত অপরাধ চক্র যা দীর্ঘদিন ধরে কলকাতায় সক্রিয় ছিল।
উপসংহার: অনলাইন বন্ধুত্ব নয় সবসময় নিরাপদ
এই ঘটনার পর পুলিশ সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেছে। ডেটিং অ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করার সময় সাবধান হওয়া জরুরি। পুলিশ জানিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে এই চক্রের আরও সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।