ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী—হিন্দু সমাজে এই দিনটিই গণেশ চতুর্থী, সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্মদিন। শাস্ত্র বলে, কোনও শুভ কাজই তাঁর পূজা ছাড়া শুরু হতে পারে না। দেবাদিদেব মহেশ্বর ও দেবী দুর্গা নিজে নির্দেশ দিয়েছিলেন, প্রথমেই গণেশের পূজা করতে হবে। তাই আজও দেশে-বিদেশে যেকোনও শুভকাজে সর্বাগ্রে গণেশ বন্দনা।

গণেশ নামের মাহাত্ম্য
গণেশ মানেই সর্ববিঘ্ননাশক। তাই এই দেবতার নামের ভক্তিতে ভরে আছে প্রতিটি পরিবার। একাধিক পুরাণে বলা হয়েছে, গণেশের নানা নাম—গণপতি, বিনায়ক, গজানন, একদন্ত, বাপ্পা ইত্যাদি। অনেকে আবার সন্তানের নাম রাখেন তাঁর গুণ অনুযায়ী—অথর্ব, দেবব্রত, মৃত্যুঞ্জয়, শাম্ভব, বিকট ইত্যাদি।

জন্মকাহিনির নানা রূপ
পুরাণের বিভিন্ন অধ্যায়ে গণেশ জন্মকথা নানা রূপে বর্ণিত। শিবপুরাণে আছে, পার্বতী নিজের গায়ের পাঁক থেকে এক কুমার সৃষ্টি করেন, শিবের সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁর মস্তক ছিন্ন হয়, পরে হাতির মুণ্ড জুড়ে তাঁকে পুনর্জীবন দেন শিব। স্কন্দপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, পদ্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ—প্রতিটি গ্রন্থেই গণেশ জন্মকথা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে উঠে এসেছে। তবে সব পুরাণই একমত—তিনি হলেন দেবগণের পূজ্য, সর্বশ্রেষ্ঠ বিঘ্ননাশক।

মোদক ও চাঁদের অভিশাপ
হিন্দু সমাজে একটি প্রসিদ্ধ কিংবদন্তি আছে। এক গণেশ চতুর্থীতে বাড়ি বাড়ি মোদক খেয়ে ফিরছিলেন গণেশ। পেট ভরা, ইঁদুর বাহনে চড়ে চলেছেন। হঠাৎ সামনে সাপ দেখে ইঁদুর ভয় পেয়ে যায়, ফলে গণেশ পড়ে যান। ফেটে যায় তাঁর পেট, সব মোদক গড়িয়ে যায় রাস্তায়। দেবতা তখন নিজে সেগুলো আবার খেয়ে নিয়ে সাপ দিয়ে পেট বেঁধে ফেলেন।
আকাশ থেকে চন্দ্র এই দৃশ্য দেখে হাসলে, গণেশ ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে অভিশাপ দেন—চতুর্থীর রাতে কেউ যদি চাঁদ দেখে, তার অকল্যাণ ঘটবে। তাই আজও ভাদ্র মাসের গণেশ চতুর্থীর দিনে চন্দ্র দর্শন এড়িয়ে চলেন বহু ভক্ত।
গণেশ কেবল দেবতা নন, তিনি ভক্তদের প্রিয় বাপ্পা। সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি আর মঙ্গল তাঁর আশীর্বাদে আসে বলে বিশ্বাস। তাই প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি শুভকাজের শুরুতেই আজও প্রথম উচ্চারিত হয় একটাই নাম—“বিঘ্ননাশক গণপতি বাপ্পা মোরিয়া!”