ভারতের রাজধানী দিল্লি দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম হিসেবে পরিচিত। এবার এই চিরাচরিত সমস্যার মোকাবিলায় শহর প্রশাসন নিয়েছে এক অভিনব পদক্ষেপ—প্রথমবারের মতো ক্লাউড-সিডিং (Cloud Seeding) বা কৃত্রিম বৃষ্টির আয়োজন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো বায়ুতে জমে থাকা ক্ষতিকর কণাকে মাটিতে নামিয়ে এনে বাতাসকে কিছুটা হলেও পরিশুদ্ধ করা।
🌦️ ক্লাউড-সিডিং কী এবং কীভাবে কাজ করে?
ক্লাউড-সিডিং হলো এমন একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যেখানে বিমান বা ড্রোনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যেমন সিলভার আয়োডাইড বা সোডিয়াম ক্লোরাইড। এগুলি মেঘের মধ্যে ঘনীভবন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, ফলে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব হয়।
এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সফলভাবে প্রয়োগ হয়েছে। দিল্লির এই উদ্যোগে আশা করা হচ্ছে, বায়ুতে ভাসমান পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM 2.5 ও PM 10) এর পরিমাণ কমে যাবে, যা শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান কারণ।

💨 দিল্লির দূষণ সমস্যা: কেন প্রয়োজন এই উদ্যোগ?
প্রতি বছর অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দিল্লির বায়ুর মান AQI স্কেলে ‘Hazardous’ স্তরে পৌঁছে যায়।
কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য—
- পার্শ্ববর্তী রাজ্যে ধান পোড়ানো (Stubble Burning)
- শহরের যানবাহনের ধোঁয়া
- নির্মাণকাজের ধুলা
- শীতকালে বায়ুর গতি হ্রাস
এই সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক ভয়াবহ ধোঁয়াশা বা “স্মগ”, যা শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ এবং চোখের জ্বালা বাড়িয়ে তোলে।
এই প্রেক্ষাপটে ক্লাউড-সিডিং একটি বিকল্প সমাধান হিসেবে আশার আলো জাগিয়েছে।

☁️ কখন ও কীভাবে হবে এই কৃত্রিম বৃষ্টি?
পরিবেশ মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এই কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের পরীক্ষা চালানো হবে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, যদি আর্দ্রতা ও মেঘের ঘনত্ব যথাযথ থাকে, তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে।
বিমান থেকে রাসায়নিক পদার্থ ছড়ানোর পর বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা জলকণায় রূপ নেয়, যা অবশেষে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে। এই বৃষ্টি পরিবেশের ধুলো ও ক্ষতিকর গ্যাসকে ধুয়ে দেয়, ফলে কয়েকদিনের জন্য AQI উন্নত হয় বলে আশা করা হচ্ছে।
🌍 বিশেষজ্ঞদের মতামত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ক্লাউড-সিডিং এককভাবে স্থায়ী সমাধান নয়। এটি একটি অস্থায়ী উদ্যোগ, যা কেবল বায়ুর গুণগত মান সাময়িকভাবে উন্নত করতে পারে।
তবে, যদি এটি সফল হয়, সরকার ভবিষ্যতে নিয়মিত ভিত্তিতে এই প্রক্রিয়া চালু করার কথা বিবেচনা করবে।
এছাড়া, পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন—
- গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া
- নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণ
- শিল্প এলাকায় নির্গমন কমানো
- শহরে সবুজায়ন বৃদ্ধি
এই উদ্যোগগুলো না হলে ক্লাউড-সিডিং এর প্রভাবও দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
🏁 উপসংহার:
দিল্লির এই সাহসী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভারতের পরিবেশ নীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। ক্লাউড-সিডিং অভিযান কেবল প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নয়, এটি একটি বার্তা—যে দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার ও বিজ্ঞান একসঙ্গে এগোচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, এই কৃত্রিম বৃষ্টি রাজধানীর আকাশে শুধু জলই আনে, নাকি এক নতুন আশার ছোঁয়াও দেয়।
📢 আপনার মতামত জানান:
আপনি কি মনে করেন কৃত্রিম বৃষ্টি দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হবে? নিচে মন্তব্যে আপনার মতামত শেয়ার করুন!






